সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও প্রতিনিধি :: ২০০৪ সালের মার্চে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী দারুল হুফ্ফাজ হফেজখানা ও এতিমখানার বার্ষিক মাহফিলে তাকে অত্যন্ত প্রাণবন্ত দেখা যায়। তিনি প্রায় ১ঘন্টা মুসলমানদের আর্থিক উন্নতির লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন এবং শেষ রাতে জিকির, তাহাজ্জুদে অংশ নেন। ফজর নামাযের পূর্বে লাটি ভর দিয়ে উপস্থিত হাজার হাজার মুসলিদের উদ্দেশ্যে তাহাজ্জুদ নামাযের গুরুত্ব বর্ণনা করেন এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। লক্ষ-লক্ষ ভক্ত অনুরক্তকে সাথে নিয়ে দীর্ঘক্ষন মোনাজাত করেন গারাঙিয়া দরবার শরীফের খলিফায়ে আজম, ব্যাপক প্রচার-প্রসার ও মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার অপরিসীম দায়িত্ব পালনকারী পীর মুর্শিদ আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা আবদুল হাই (রাহঃ)।
এ মহান অলী ১৯৪৮ সালের ২২ জানুয়ারী (জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসারে) সাতকানিয়া উপজেলার গারাঙিয়া রঙিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আব্বাজান মরহুম আলহাজ্ব মাওলানা হাফেজ আবদুল জব্বার (রাহঃ) এবং আম্মাজান মরহুমা হাফেজা খাতুন সাহেবা (রাহঃ) পরিবারের ৬পুত্র ১ কন্যার মধ্যে তিনি ছিলেন ৫ম পুত্র। পরিবারের সবাই ছিলেন সৎ ও ধার্মিক। জম্মসুত্রে তিনি চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার গারাঙিয়া রঙিপাড়া পাড়ায় হলেও ১৯৭২ সালের দিকে তিনি সপরিবারে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নে দারুল হুফফাজ হাফেজখানা-এতিমখানা-মসজিদ প্রতিষ্টা করে সুদীর্ঘকাল দ্বীনের প্রচার-প্রসারের পর স্থায়ীভাবে ৪৫ বছর ধরে গর্জনতলী গ্রামে বসবাস করেন। তারই প্রতিষ্টানের নামানুসারে ইউনিয়নের হাফেজখানা সড়ক নামকরণ করা হয়। মহাসড়কের লাগোয়া সড়কের সম্মুখে করা হয়েছে সুদৃশ্য হাফেজখানা গেইট। ছাত্র জীবনে আবদুল হাই কৃতিত্বের সাথে কোরআন হাফেজ-দাখিলে উত্তীর্ণ হয়ে গারাঙিয়ার দরবার শরিফের প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা বড় হুজুর ও ছোট হুজুর (রাহঃ) এর ছোহবত লাভ করেন। খুটাখালীতে আসার পূর্বে তিনি একটানা ১২ বছর চকরিয়া উপজেলার কাকারায় হাফেজখানা-এতিমখানা ও মসজিদের দায়িত্ব পালন করেন। সেখান থেকে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সৎপথ প্রদর্শন করে অসংখ্য হিন্দুকে নওমুসলিম করেন। গারাঙিয়ার বড় হুজুর কেবলার নির্দেশে তিনি খুটাখালীতে দারুল হুফফাজ হাফেজখানা-এতিমখানা প্রতিষ্টা করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি মহা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন এবং খুটাখালী তমিজিয়া ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসার গর্ভনিং বডির সাবেক সহ সভাপতিসহ একাধিক প্রতিষ্টানের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে হাফেজখানার ছাত্র সংখ্যা প্রায় ২ শতাধিক। এছাড়াও তিনি র্দীঘ সময় পর্যন্ত গারাঙিয়ার বড় হুজুর পীর মুর্শিদের সার্বক্ষনিক তত্ববধানে থাকেন। পীর মুর্শিদের মনোন্নয়নক্রমে তিনি গারাঙিয়া দরবারের খলিফা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এখানে বলা বাহুল্য যে বড় হুজুর কেবলা (রহঃ) এর সাথে হাফেজ আবদুল হাই (রহঃ) এর পারিবারিক আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকলেও রক্তের কোন সম্পর্ক ছিলনা। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেড় শতাধিক মসজিদ, হাফেজখানা-এতিমখানা ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মরহুম পীর সাহেব কেবলা সর্বশেষ ২০১৬ সালে হজ্ব পালন করে শারিরীক অসুস্থতার কারনে আর যেতে পারেনি। জীবনে ১৬ বার হজ্ব পালন করেন তিনি। এছাড়া বার্মা, ভারত সৌদি আরবসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করেন। প্রসঙ্গ ক্রমে ২০১৭ সালের সে দিনটির কথা এখনো আমার স্মৃতিতে আঘাত করে। যে স্মৃতি কোনদিন ভুলার নয়। ২০১৭ সালে হাফেজখানায় আয়োজিত মরহুম মাষ্টার সোলতানের রুহের মাগফেরাত কামনায় অনুষ্টিত ইফতার মাহফিলের কথা উলেখ না করে পারছিনা। এতে যুগ শ্রেষ্ঠ ওলীয়ে কামেল হাফেজ আবদুল হাই দীর্ঘ আধ ঘন্টা ব্যাপী আন্তরিকতার সাথে বসে আয়োজকদের কথা শোন ছিলেন। সেদিন একই অনুষ্টানে পীর ছাহেব কেবলার পাশে বসে নিজেকে জগতের সেরা সুখী ভেবেছি একথা ভেবে যে, পীর ছাহেব কেবলা মতো মহান ব্যক্তিত্বের পাশে বসে কথা বলার সুযোগ হয়েছে।
চলতি ২০১৮ সালে তাঁর সাথে ইফতার করা আর হবেনা। পীর ছাহেব কেবলা তার আগেই সকলকে কাঁদিয়ে মাহবুুবের ডাকে সাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ ভক্ত অনুরক্তকে সুখ সাগরে ভাসিয়ে এতিম, অসহায়, দুস্থ মানবতার সেবক ও আধ্যাত্মিক সাধক খুটাখালীর পরম শ্রদ্ধেয় পীর মুর্শিদে বরহক আলহাজ্ব হাফেজ আবদুল হাই গত ২২ জানুয়ারী ২০১৮ ইং সোমবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী আলহাজ¦া জয়নাব বেগম, ৫ পুত্র যথাক্রমে আলহাজ্ব মাওলানা আনোয়ার হোছাইন, আলহাজ্ব মাওলানা নুর হোছাইন, আলহাজ্ব মো: নুমান, আলহাজ্ব মো: ইসমাইল, আলহাজ্ব মো: দিদারুল ইসলাম, ২ কন্যা ফাতেমা বেগম ও আলহাজ্বা মাহবুবা আল মুবাশারা জেমি (বর্তমানে চট্রগ্রামের সলিমা সিরাজ মহিলা মাদরাসায় কামিলে অধ্যয়নরত)সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান। আগামীকাল মঙলবার বিকেল ৫টার সময় খুটাখালী হাইস্কুলে মরহুমের জানাযা শেষে দাফন প্রক্রিয়া বিকেলে পারিবারিক সিদ্ধান্তে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন হুজুরের ভাতিজা দারুল হুফফাজ হাফেজখানার পরিচালক হাফেজ মো: ইউসুফ।
লেখক-সেলিম উদ্দিন, খুটাখালী, চকরিয়া-কক্সবাজার।
পাঠকের মতামত: